সূরা আল-ফালাক্ব আল-কুরআনের ১১৩তম সূরা। এটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সূরার আয়াত সংখ্যা ৫টি। এ সূরার প্রথম আয়াতের শেষ শব্দ হলো র্যা (ফালাক্ব)। এ শব্দ থেকেই এ সূরার নাম সূরা আল-ফালাক্ব রাখা হয়েছে।
সূরা আল-ফালাক্ব ও সূরা আন-নাস-এর মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এ সূরা দুটিতে বিভিন্ন জিনিসের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে। এ সূরা দুটি নাজিলের কারণ নিম্নরূপ:
একবার লাবীদ ইবনুল আ'সাম নামক এক ইহুদি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর উপর জাদু করে। এ কাজে সে তার কন্যাদের সাহায্য নেয়। তারা গোপনে রাসুল (স.)-এর একটি পবিত্র চুল সংগ্রহ করে এবং তাতে এগারোটি গিরা দিয়ে জাদু করে। ফলে রাসুল (স.) অসুস্থ হয়ে পড়েন। জাদুর কারণে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কষ্ট হতে থাকে। এমতাবস্থায় আল্লাহ তায়ালা এ সুরা দুটি নাজিল করেন। এ সূরা দুটিতে মোট ১১টি আয়াত রয়েছে। প্রতিটি আয়াত পড়ে প্রতিটি গিরাতে ফুঁক দিলে জাদুর প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়। রাসুল (স.) সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।
শব্দার্থ
الْفَلَقِ - প্রভাত, ঊষা।
من - হতে, থেকে।
خَلَقَ - তিনি সৃষ্টি করেছেন।
غَاسِقٍ - রাতের অন্ধকার।
إذا - যখন।
وَقَبَ - গভীর হলো, আচ্ছন্ন হলো।
التفات - ফুঁক দানকারী নারীগণ।
الْعُقَدِ - গ্রন্থিসমূহ, গিরাসমূহ।
حاسد - হিংসাকারী, হিংসুক।
حسن - সে হিংসা করল।
অনুবাদ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ
১. আপনি বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি প্রভাতের স্রষ্টার নিকট।
مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
২. তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে।
وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ
৩. রাতের আঁধারের অনিষ্ট থেকে, যখন তা গভীর হয়।
وَمِنْ شَرِّ النَّفْتِ فِي الْعُقَدِ
৪. এবং অনিষ্ট থেকে ঐ সমস্ত নারীদের, যারা গ্রন্থিতে ফুৎকার দেয়।
وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
৫. এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।
ব্যাখ্যা
এ সূরায় আল্লাহ তায়ালার নিকট অনিষ্টকর বস্তু থেকে আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এর প্রথম আয়াতে ঊষার রব আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে। মূলত আল্লাহ পাক সকল শক্তির উৎস। বিশ্বজগতের সবকিছুই তিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনিই রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে রূপান্তর করেন। তিনিই সকাল, সন্ধ্যা, ঊষা ইত্যাদির আগমন ঘটান। সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে তিনিই রক্ষা করেন। এজন্য সূরার প্রথমেই আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে।
এর পরবর্তী আয়াতগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ের অনিষ্ট বা ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সবকিছুরই স্রষ্টা। এসব সৃষ্টির মধ্যে অনেক হিংস্র, বিষাক্ত ও অনিষ্টকর সৃষ্টিও রয়েছে। এগুলো মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এগুলোর অনিষ্ট থেকে রক্ষাকর্তা হলেন মহান আল্লাহ। গভীর রাতে নানারূপ বিপদাপদ ঘটতে পারে। যেমন: জিন, শয়তান, চোর, ডাকাত, শত্রুর আক্রমণ ইত্যাদি। এসবের অনিষ্ট থেকেও রক্ষাকর্তা মহান আল্লাহ। তাছাড়া জাদুকর নরনারী ও হিংসুকের হিংসা থেকে আশ্রয়দাতাও আল্লাহ তায়ালা। আয়াতগুলোতে উল্লিখিত সমুদয় বিষয় থেকে আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে।
নৈতিক শিক্ষা
আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রভু। তিনিই সকল কিছুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান। সুতরাং সকল বিপদে-আপদে আমরা তাঁরই নিকট সাহায্য চাইব। সব ধরনের অনিষ্ট থেকে তার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করব। সাথে সাথে হিংসা, জাদু-টোনা, অপরের ক্ষতিসাধন ইত্যাদি কাজ থেকে আমরা নিজেরা বিরত থাকব।
Read more